সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন
ইমন চৌধুরী, পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে বিভিন্ন জাতের হাঙর নিধন করছেন জেলেরা। সাগর থেকে ধরা এসব হাঙর পিরোজপুরের পাড়েরহাট শুঁটকি পল্লীতে বিক্রি হয় চড়া দামে। এগুলো শুঁটকি হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চলে যায় বিদেশে। আইনে হাঙর শিকার নিষিদ্ধ থাকলেও চড়া দামের জন্য জেলেরা অন্যান্য মাছের সঙ্গে হাঙর নিধন করছেন। যে কারণে দিন দিন বঙ্গোপসাগরে কমছে হাঙরের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এভাবে নির্বিচারে হাঙর শিকার চললে এক সময় বঙ্গোপসাগর থেকে হাঙর বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে পিরোজপুরের জেলেদের মধ্যে হাঙর নিধন বন্ধে নেই কোনো সরকারের প্রচার-প্রচারণা বা অভিযান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে ডলফিন, হাঙরসহ অনেক প্রজাতির জলজ প্রাণিকে বন্যপ্রাণির আওতায় এনে এগুলোকে শিকার করা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে জেলেদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা না থাকায় তারা এ ব্যাপারে সচেতন হচ্ছেন না।
এক সময় বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে হাঙর পাওয়া যেত। তবে এখন খুবই কম ধরা পড়ছে। কামট (হাঙর), গোলপাতা ও শাপলাপাতার চাহিদা বাংলাদেশে না থাকলেও এসব হাঙরের শুঁটকি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় চড়া দামে। চীনসহ বিভিন্ন দেশে হাঙরের রয়েছে অত্যাধিক চাহিদা। অভিজাত হোটেলগুলোতে বেশি দামে হাঙর কেনা হয় বলে জানান জেলেরা।
তবে এই বিষয়ে মৎসজীবীরা ক্যামেরার সামনে ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, একটি বড় হাঙরের ওজন প্রায় চার-ছয় মণ। একটি ধরতে পারলে তা ৩০-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এছাড়া ছুরি (ছোট) হাঙর আকার অনুযায়ী ২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সপ্তাহখানেক বঙ্গোপসাগরে থাকলে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছোট হাঙর ধরা পড়ে জালে। মাঝে মাঝে জালে দুই-একটি বড় হাঙরও ধরা পড়ে। জেলেরা বাড়তি আয়ের জন্য ছোট প্রজাতির হাঙরগুলো শিকার করে থাকেন।
অভিযোগ আছে, দক্ষিণ অঞ্চলের অনেক জেলে আছেন যারা শুধু হাঙর ধরতেই সমুদ্রে যান। তবে বঙ্গোসাগরের বাংলাদেশি সীমানায় কী পরিমাণ হাঙর রয়েছে তার নেই কোনো পরিসংখ্যান। এ জেলায় বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তায় নেই কোনো কর্মকর্তা।
এ দিকে, জলজ প্রজাতির প্রাণিগুলোকে না ধরার পরামর্শ দিয়েছেন পিরোজপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী। তিনি বলেন, জলজ প্রজাতির এই প্রাণিগুলোকে রক্ষায় ওই এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হবে।
পরিবেশবিদরা মনে করেন, পিরোজপুর পাড়েরহাটের শুঁটকি পল্লীতে সামান্য কিছু হাঙর বিক্রি হয়। মূলত হাঙরকে বাঁচাতে হলে সুন্দরবনের দুবলার চরে হাঙর শুকানো ও আহরণ বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারিভাবে জেলেদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে পারলেই হাঙর নিধন বন্ধ হবে আশা প্রকাশ করেন পরিবেশবিদরা।
Leave a Reply